অন্নদার আত্মপরিচয়, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর

কবি পরিচিতি : ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার
অন্তর্গত পেড়াে গ্রামে কবি ভারতচন্দ্র রায়ের জন্ম হয়। তার পিতার নাম ছিল নরেন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি ছিলেন অভিজাত রাজবংশের সন্তান এবং কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের উত্তরপুরুষ। কবির
মাতার নাম ছিল ভবানী দেবী। পিতার আর্থিক দুরবস্থার জন্য কবিকে বাল্যকালে মাতুলালয়ে অতিবাহিত করতে হয়। তিনি
চোদ্দ-পনেরাে বছর বয়েসেই সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। পরে ফারসি - ভাষাতেও দক্ষতা অর্জন করেন। কবির জীবন ছিল খুবই দুর্ভাগ্যপূর্ণ। নিজের মনােমতাে পাত্রীকে বিবাহ করা ফলে তিনি আত্মীয়স্বজন কর্তৃক পরিত্যক্ত হন। দুর্ভাগ্যও তার পিছনে পিছনে ঘােরে। বর্ধমান রাজার কাছে আর্জি পেশ করতে গিয়ে তিনি কারারুদ্ধ হন। নানা ভাগ্য বিপর্যয়ের পর তিনি মহারাজ
কৃষ্ণচন্দ্রের নজরে পড়েন এবং মহারাজের সভাকবি নিযুক্ত হন। তার কবিত্বশক্তির
জন্য মহারাজ তাকে রায়গুণাকর' উপাধিতে ভূষিত করেন। মহারাজ প্রদত্ত মুলাজোড়া
গ্রামেই তিনি মাত্র ৪৮ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন। সময়টা ছিল ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ।
‘অন্নদামঙ্গল’ কবির সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা। এছাড়া তিনি ‘নাগাষ্টক’ ও ‘রসমঞ্জরী' কাব্য।
এবং সংস্কৃত ও হিন্দি মিশ্রভাষায় 'চণ্ডী’ নামে একটি নাটকও রচনা করেছিলেন।
তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও ছান্দসিক। মধ্যযুগের কবিরা যেখানে পয়ার-ত্রিপদী।
ছন্দের বাইরে যেতে পারেন নি, ভারতচন্দ্র সেখানে ছদস্রষ্টা ও ছন্দশিল্পী রূপে প্রতিষ্ঠা
লাভ করেছিলেন। তার কাব্যে পয়ার-ত্রিপদীও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি একাধিক
সংস্কৃত ছন্দকে বাংলায় প্রয়ােগ করেছেন। তার ছন্দ ব্যবহার আধুনিক যুগের
ছান্দসিকদেরও আলােচনার বিষয়বস্তু। মােহিতলাল মজুমদার বলেছেন, “ভারতচন্দ্রের ছন্দের মধ্যে স্বাভাবিক স্বরভঙ্গি ফুটে উঠেছে।” তার কাব্যে রয়েছে প্রসাদ গুণ। বাংলা
ভাষাকে আধুনিক করে তােলার ক্ষেত্রেও তার অবদান কম নয়। ফারসি, হিন্দি, সংস্কৃত
থেকে অজস্র শব্দ গ্রহণ করে বাংলা কাব্যের শব্দভাণ্ডার তিনি বিস্তৃত করেছিলেন,
বাংলা ভাষার প্রকাশ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন অনেকটা। তার কাব্যের
সমালােচকরা তাকে প্রাচীন বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী' বলে অভিহিত করে
থাকেন। অলংকার প্রয়ােগেও তিনি ছিলেন অভিনব। শব্দালংকার ও অর্থালংকার তার
হাতে বাজিকরের পুতুল হয়ে উঠেছে। বাংলা কাব্যের আসরে ভারতচন্দ্রের আসন যে
প্রথম শ্রেণির কবিদের পংক্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে তার জন্য তার অমর কাব্য
'অন্নদামঙ্গল’-এর কাছেই তিনি ঋণী। মধ্যযুগের কবি হয়েও ভারতচন্দ্র আধুনিক মননের
কবি। তিনিই যথার্থ অর্থে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শুভ সূচনা করেছেন।


No comments:

Post a Comment

|| সারমর্ম ঃ দেবী অন্নপূর্ণা গাঙ্গিনীর তীরে এসে মাঝিকে পার করে দেবার জন্য আহ্বান জানান। নদীর ঘাটে ঈশ্বরী পাটুনী নামে এক মাঝি তার ডাকে সাড়া ...