তোমার প্রিয় কবি [২০১২]

আমার প্রিয় কবি


ভূমিকা: ইংরাজদের ভারতবষ আধকার ও রাজ্যশাসনের কালেই বাংলা সাহিত্যে।
আধুনিকতার সূত্রপাত হয়। সৃষ্টি হয় বাংলা গদ্যের। ফলত, পাশ্চাত্য শিল্প, সংস্কৃতি ও
গঠিতাের প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে স্থান পেল নানা প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও কাব্য-
অবতা নয় নয় করেও এই সৃষ্টির কাল প্রায় দুশাে বছরের কাছাকাছি। ইতিমধ্যে নানা
প্রথিতযশা কবি বাংলা সাহিত্যে তাদের নিজেদের অবদান রেখে পাঠকমনে চিরস্থায়ী
আসন লাভ করেছেন, এসেছে রচনাধারায় নানা পরিবর্তন। তবুও উপনিষদিক ভূমা
চেতনায় উদ্বুদ্ধ আনন্দবাদী কবি রবীন্দ্রনাথই আমার প্রিয় কবি। কারণ তার লেখার মধ্য
দিয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে মানবতাবাদের শাশ্বত ধ্বনি।
  জন্ম, বংশপরিচয় ও শিক্ষা : তৎকালীন কলকাতার লব্ধপ্রতিষ্ঠ জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত
ঠাকুর পরিবারে ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার
নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মায়ের নাম সারদা দেবী। সেকালের কলকাতার অন্যতম
স্বনামধন্য ব্যক্তি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন তার পিতামহ। একদিকে জমিদারি অর্থাৎ
অতুল বিত্ত ও ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য, অন্যদিকে সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিমণ্ডল রবীন্দ্রনাথের বেড়ে
ওঠার ও প্রতিভার স্ফুরণ ঘটানাের সহায়ক রূপে কাজ করেছিল।
| তার পাঠ্যজীবনের হাতেখড়ি বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে হলেও পরে তিনি নর্মাল স্কুল
ও ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে কিছুকাল পড়াশুনা করেন। কিন্তু স্কুলের চার দেওয়ালের
বন্ধন তাকে বেশিদিন বেঁধে রাখতে পারেনি। তাই অল্পদিনের মধ্যেই নির্দিষ্ট গণ্ডিবদ্ধ।
স্কুলের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটেছিল। তবে বাড়িতে বিভিন্ন শিক্ষক এসে পড়িয়ে যেতেন।
একসময় তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলেত গেলেও তাঁর সেই প্রয়াস সার্থকতা
পায়নি। তবুও বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করে তিনি শিক্ষা ও জ্ঞানের পরিধিকে প্রশস্ত
করেছিলেন।

রবীন্দ্র-সৃষ্টির ভাব ও ভাবনা : সীমার মাঝে অসীম তুমি’-র মতােই রবীন্দ্রপ্রতিভা
বহুমুখী ও বিচিত্রপথগামী। ভাব-ভাবনার দিক থেকে মানবজীবনের বিচিত্র ভাবনা, মানুষের
মনের অতি সূক্ষ্ম ভাবনা ও অভূতপূর্ব ইন্দ্রিয়ানুভূতির ইন্দ্রজাল তার রচনাকে শিল্প সৌন্দর্যে
পরিপূর্ণ করে তুলেছে। তাঁর লেখা ‘সােনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘কড়ি ও কোমল', বলাকা,
চৈতালি’, ‘খেয়া’, ‘গীতালি’, ‘গীতিমাল্য’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘সেঁজুতি', 'প্রান্তিক প্রভৃতি কাব্যের
কবিতার মধ্য দিয়ে যে কবিকে প্রত্যক্ষ করি তিনি সৌন্দর্যের পূজারি। প্রেম ও প্রকৃতি ও মানুষকে কবি বিশ্বপ্রাণস্রোতের সঙ্গে অচ্ছেদ্য সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। সংকীর্ণতা, ।
স্বার্থপরতা ও আবিলতা সরিয়ে জীবনকে স্বচ্ছ, সুন্দর ও শান্ত করার কথা ভেবেছেন।

রবীন্দ্রনাথকে প্রিয় বলার কারণ : রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতির
মধ্যে মিলনের মাধ্যমে জাতির সমন্বয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন
ভারতের পথ মিলনের পথ, ঐক্যের পথ, প্রীতির পথ। আধুনিক ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতা,
জাতিভেদ, বর্ণভেদ, অস্পৃশ্যতা ও নানা কুসংস্কার কবিকে ব্যথিত করেছিল। পররাজ্যগ্রাসী।
সাম্রাজ্যবাদী মনােভাবও কবির মনে বেদনার সৃষ্টি করেছিল। তাই এরই প্রতিবাদ তার
কণ্ঠে নির্দ্বিধায় উচ্চারিত হয়েছে। আসলে কবি চেয়েছিলেন মানবতাবাদের শিক্ষা ও
মানবতাবাদের দীক্ষা।

রবীন্দ্রনাথের এই মহত্তর ভাবনাই আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছে। তাই
রবীন্দ্রনাথের বৈপ্লবিক চিন্তা, মানবতাবাদ জাগানাের প্রচেষ্টা বর্তমান সমাজজীবনে বিশেষ
জরুরি। এই কারণেই অনেক কবি বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে বিচরণ করলেও বা খ্যাতি পেলেও
রবীন্দ্রনাথই আমার প্রিয় কবি।
উপসংহার : রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানাে পাপ। তিনি
নিজেকে ‘আমি তােমাদেরই লােক’ পরিচয়ে পরিচিত হতে চেয়েছেন। তাই সবশেষে
বলি, যতদিন এই বিশ্ব থাকবে, বিশেষ করে বাঙালি জাতি ও বাংলাভাষা থাকবে ততদিন
রবীন্দ্রনাথ চিরঅক্ষয় ও চিরঅমর হয়ে থাকবেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের দরবারে বিশ্বকা
হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় বিশ্বসাহিত্যেও তাঁর স্থান দৃঢ় হয়ে আছে। তাই রবীন্দ্রনাথ সমা
| বাঙালি জাতি ও বাংলা সাহিত্যের এক চরমতম গর্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত।

No comments:

Post a Comment

|| সারমর্ম ঃ দেবী অন্নপূর্ণা গাঙ্গিনীর তীরে এসে মাঝিকে পার করে দেবার জন্য আহ্বান জানান। নদীর ঘাটে ঈশ্বরী পাটুনী নামে এক মাঝি তার ডাকে সাড়া ...