অভিসারের পূর্বপ্রস্তুতি | গােবিন্দদাস কবি পরিচিতি



কবি পরিচিতিঃ গােবিন্দদাস ছিলেন বৈষ্ণব কবি। আনুমানিক
১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি বর্ধমান জেলার কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামে
নিজ মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কবির মাতামহ দামােদর সেন
ছিলেন সুপণ্ডিত এবং শাক্ত মতাদর্শে বিশ্বাসী। কবির আদি নিবাস
ছিল কুমারনগর। বৈদ্যবংশীয় কবি গােবিন্দদাসের পিতার নাম
চিরঞ্জীব সেন, মায়ের নাম সুনন্দা দেবী। কবির পিতা ছিলেন পরম
বৈষ্ণব। কবির একমাত্র পুত্রের নাম দিব্যানন্দ সেন এবং পৌত্রের
নাম ঘনশ্যাম দাস। এরা উভয়েই বৈষ্ণব সমাজ ও সাহিত্যে সুপরিচিত ছিলেন। সংস্কৃত
ভাষায় গােবিন্দদাসের গভীর ব্যুৎপত্তি ছিল। বৃন্দাবনের গােস্বামীরা অর্থাৎ শ্রীজীব গােস্বামী
প্রমুখ গােবিন্দদাসকে ‘কবিরাজ’ উপাধি দিয়েছিলেন। দাস্যরসের পদ রচনা না করেও
“দাস’ উপাধি তিনি ব্যবহার করেছেন অতিরিক্ত বিনয়বশত। সম্ভবত ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে
তার মৃত্যু হয়।
| গােবিন্দদাস হলেন চৈতন্য-পরবর্তী যুগের একজন শ্রেষ্ঠ ও শক্তিমান কবি। কোন
কোন সমালােচক তাকে চৈতন্যোত্তর যুগের শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব পদকর্তা বলেছেন। শ্রীচৈতন্য
মহাপ্রভুর দেহত্যাগের তিন বছর পর গােবিন্দদাস জন্মগ্রহণ করেন। মানস দৃষ্টিতে
মহাপ্রভুর ভাবমূর্তি অঙ্কন করে তিনি যে প্রত্যক্ষ ডয়ানের পরিচয় দিয়েছেন তা এককথায়
অনবদ্য। তার রচিত গৌরলীলা-বিষয়ক পদগুলি মহাপ্রভুর প্রত্যক্ষদর্শীদের রচিত পদ
অপেক্ষা অধিক উজ্জ্বল ও কবিত্বময়। অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে তিনি শ্রীচৈতন্যের ভাব
তন্ময়তার রূপটি অঙ্কন করেছেন। ভক্তিপ্রাণতা, চিত্রধর্মিতা, সংযম, বিষয়বস্তুর অভিনবত্ব,।
অলংকরণ দক্ষতা তার কাব্যের মূল বৈশিষ্ট্য।

গােবিন্দদাসের নামে বা ভণিতায় সাতশাের বেশি পদ পাওয়া গিয়েছে। পদগুলির ভাষা
অধিকাংশই ব্রজবুলি। ব্রজবুলি হল এক কৃত্রিম সাহিত্য ভাষা। এই ভাষাকে গােবিন্দদাস
নির্দিষ্ট রূপ-কাঠামাে দেবার চেষ্টা করেছেন। বিদ্যাপতির কবিতার অনুসরণ ও ব্রজবুলি।
ভাষায় কবিতা রচনার কারণে গােবিন্দদাস বৈষ্ণব সমাজে দ্বিতীয়
বিদ্যাপতি' রূপে প্রশংসিত হয়েছেন। কবি বল্লভদাস গােবিন্দদাস সম্পর্কে লিখেছেন,
“বিদ্যাপতি হইতে নহে নন গােবিন্দের কবিত্বগুণ। গােবিন্দ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি।”

গােবিন্দদাস পদরচনার ক্ষেত্রে বিদ্যাপতির ভাবানসারী ছিলেন। তাই তাকে বিদ্যাপতির
ভাবশিষ্যও বলা হয়। কাব্যের আঙ্গিকে কোন কোন দিক থেকে তিনি বিদ্যাপতির
চেয়েও উচ্চস্তরের কবি ছিলেন। তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান ভক্তকবি। তার পদে গৌরলীলা
ও রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক লীলা—উভয় লীলারই পরিচয় মেলে। তিনি নিজেকে ছােট
বিদ্যাপতি’ বলে আনন্দ পেতেন।

No comments:

Post a Comment

|| সারমর্ম ঃ দেবী অন্নপূর্ণা গাঙ্গিনীর তীরে এসে মাঝিকে পার করে দেবার জন্য আহ্বান জানান। নদীর ঘাটে ঈশ্বরী পাটুনী নামে এক মাঝি তার ডাকে সাড়া ...