কুটির শিল্প ও আসাম

ভূমিকা ও প্রাক ব্রিটিশ যুগে আসাম কুটিরশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। স্মরণাতীত কাল
হতেই আসামের কাঠের নির্মিত দ্রব্য, লৌহের জিনিস, বাঁশ ও বেতের নির্মিত সামগ্রী,
মাটির বাসন, সােনা ও রূপার অলঙ্কার, হাতির দাঁতে নির্মিত শৌখিন দ্রব্য, কাসা ও
পিতলের দ্রব্যাদির সুনাম ছিল। বয়ন ও রেশম শিল্প ও প্রাচীনকাল থেকে আসামে বিশেষ
স্থান অধিকার করে আছে। এককালে এই সকল শিল্প আসামের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা
পালন করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনে আসামের কুটিরশিল্পের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা
দেয়। বর্তমানে আসামের অধিকাংশ কুটিরশিল্পই ধ্বংসের সম্মুখীন। আসামের অর্থনৈতিক
বিকাশে কুটিরশিল্পের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি।

আসামের কুটিরশিল্প বিকাশের পক্ষে অন্তরায় ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আসামে
কুটিরশিল্প বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দেশীয় কারিগরগণ নানা রকমের সমস্যার
সম্মুখীন হয়েছেন। প্রধান সমস্যাগুলি হল—(১) প্রাচীন যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি ব্যবহার,
(২) কাঁচামালের অভাব; (৩) পণ্য সামগ্রী বিক্রির বাজারের অভাব; (৪) মূলধনের অভাব,
(৫) বিভিন্ন শিল্পে প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি।

আসামের শিল্পসমূহের বিবরণ ঃ আসামের প্রধান প্রধান কুটিরশিল্প হল হতচালিত
ভাত ৰা বয়ন শিল্প, রেশম শিল্প, কাসা ও পিতল শিল্প, বাঁশ ও বেতের শিল্প।
| বয়ন শিল্প বা হস্তচালিত শিল্প আসামের কুটিরশিল্পের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে
প্রায় পাঁচ লক্ষ হস্তচালিত তাঁত শিল্প আছে। এই শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে এ
লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। রেশম শিল্প আসামের পরম্পরাগত ।
রেশম শিল্পের মধ্যে এণ্ডি ও মুগা প্রধান। আসাম সরকার রেশম শিল্পের উন্নতি
প্রকার চেষ্টা করছেন।

কাঁসা শিল্প আসামের কুটিরশিল্পের মধ্যে অন্যতম। এটি আসামের এক
কুটিরশিল্প। কামরূপ জেলায় সর্থেবাড়ি কাঁসার বাসন শিল্পের জন্য বিখ্যাত বই
শিল্প নানাপ্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এটিরশিল্পের মধ্যে পিতল শিঙ্কাও ও
কামরূপ জেলার হাজো হল পিতল শিল্পের প্রধান কেন্দ্র। এই শিল্পে সমভ বং
শ্রমিক তাদের জীবিকা অর্জন করে।
আসামের অর্থনীতিতে বাঁশ ও বেতের শিল্প গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এই।
এর মাধ্যমে কৃষিজীবী মানুষ অবসর সময়ে উপার্জন করতে পারে। কিন্তু বাঁশ ও
করে নির্মিত সামগ্রীর চাহিদা হ্রাস হওয়ায় বর্তমানে এই শিল্প তেমন প্রসার লাভ করতে
পারছে না।
উপরিউক্ত কুটিরশিল্প ব্যতীত লােহার কাজ, সােনা ও রূপার কাজ, মাটির বাসনপত্র,
কাপড় কাচার সাবান, ট্রাঙ্ক, অলংকার, মৌমাছি পালন, নৌকা নির্মাণ, শ্রেটি নির্মাণ, পুতুল
তৈরি, বিড়ি প্রস্তুত প্রভৃতি কুটিরশিল্প হিসাবে আসামের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করছে।
আসামে কুটিরশিল্পের প্রয়ােজনীয়তা : আসাম প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ একটি
রাজ্য। কিন্তু এই রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণসন্ধ্যবহার এখনও হয়নি। আসামের
জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। আসামের বেকার সমস্যা একটি
প্রধান সমস্যা। আসামের সম্পদরাজির সুব্যবহার, কৃষকগণের আয় বৃদ্ধি, বেকার সমস্যার
সমাধান প্রভৃতির জন্য মুদ্র ও কুটিরশিল্পের উন্নতির প্রয়ােজন। কুটির ও ক্ষুদ্রায়তন শিল্পসময় আমাদের আর্থিক ওয়ানে যথেষ্ট সাহায্য করে। আসন।
প্রধানত কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। অধিকাংশ লােক কৃষিজীবী। এই দরিদ্র কৃষকাশকে কুটিরশিল্পই
সাহায্য করতে পারে।
আসামের অষকগণ মাত্র তিন-চার মাস কৃষিকার্যে নিয়ােজিত থাকে। অবশিষ্ট সময় নষ্ট
হয়। এই সময় কটরশিল্পজাত সামগ্রী উৎপাদনে ব্যবহার করে কৃষকগণ লাভবান হতে
পরে। আসামে কটিরশির সুবাগুলির চাহিদা আছে। এই সামগ্রী উৎপর করবার ফলে
উৎপাদনকারী লাভবান হয়।
উপসংহারঃ আসনে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ, বেত, এণ্ডি মুগা, পাটি প্রতি উৎপাদিত

এ অন করশিল্পের প্রয়ােজন। কুটিরশিল্প একটি জাতির
হয়। এই সামগ্ৰীসমূহ ব্যবহারের জন্য কুটির শিল্পের প্রয়োজন। কুটির শিল্প একটি জাতির অঙ্গ। ঐতিহ্য রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কুটিরশিদের জয়ন আর্থিক উন্নয়নে সাহায্য করে।

No comments:

Post a Comment

|| সারমর্ম ঃ দেবী অন্নপূর্ণা গাঙ্গিনীর তীরে এসে মাঝিকে পার করে দেবার জন্য আহ্বান জানান। নদীর ঘাটে ঈশ্বরী পাটুনী নামে এক মাঝি তার ডাকে সাড়া ...